![]() |
এখানে অনেকগুলো মুরগি |
প্রাণীসম্পদের মধ্যে হাসঁ মুরগি অন্যতম। সুতরাং এই হাসঁ-মুরগির বংশবৃদ্ধিতে ডিম ফুটানো প্রকৃতিক উপায়ে বাচ্চা ফোটানোর প্রযুক্তির আবদান সম্পর্কে আলোচনা করবো। ডিম ফুটানোর জন্য প্রথমত উর্বর ডিম দরকার। ডিম বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যে সমস্ত বৈশিষ্ট্যের উপর জোর দেওয়া প্রযোজন তাহলো -
১। মসৃণ, মোটা ও শক্ত খোসার ডিম
২। স্বাভাবিক রঙের ডিম
৩। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ডিম
৪। ৫০-৬০ গ্রাম ওজনের ডি
৫। ডিমের বয়স গ্রীষ্মকালে ৩-৪ দিন এবং শীতকালে ৭-১০ দিন।
ডিম ফুটানোর পদ্ধতি : ডিম ফুটানোর দুই ধরনের পদ্ধতি রয়েছে। যেমন প্রকৃতি পদ্ধতি ও কৃত্রিম পদ্ধডি। প্রকৃতিক পদ্ধতিতে হাসঁ মুরগি দ্বারা ডিম ফটানো হয়। গ্রামে গৃহস্থ বাড়িতে প্রাকৃতিক পদ্ধতিই ব্যবহত হয়। এতে অর্থের বিনিয়োগ লাগে নাহ। অন্যদিকে তূষ পদ্ধতি বা ইনকিউবেটর পদ্ধতি ব্যবহার করে কৃত্রিমভাবে ডিম ফোটানোর মাধ্যমে বাচ্চা উৎপাদন করা হয়।
আরো পড়ুন :
▪ ৬০০ টি ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর ইনকিউবেটর
▪ ১০০০ হাজার ডিমের ফুল অটোমেটিক ইনকিউবেটর মেশেইন
▪ সম্পূরক খাদ্য : মাছের সম্পূরক খাদ্য, কার্প জাতীয় মাছ
▪ সবুজ সার তৈরি
▪ মৌসুম নিরপেক্ষ ফসল
▪ ভুট্রা চাষ পদ্ধতি : জাত, মাটি, বপন সময়, বীজের হার ও বপন পদ্ধতি
▪ ভুট্টা চাষে পরিচর্যা ও ফসল সংগ্রহ
▪ গঁাদা ফুলের চাষ পদ্ধতি
▪ পেয়ারা চাষ পদ্ধতি
▪ কৈ মাছ চাষ পদ্ধতি
▪ মুরগি পালন পদ্ধতি
▪ মুরগির খাদ্য ও পানি ব্যবস্থাপনা
▪ মুরগির রোগ ব্যবস্থাপনা
▪ ছাগল পালন পদ্ধতি
▪ ছাগলের রোগ দমন
প্রাকৃতিক পদ্ধতি হলো : মুরগির নিজের দেহের তাপ দিয়ে নিষিক্ত ডিম ফোটানোকে প্রকৃতিক পদ্ধতি বলে।
এ পদ্ধতি আমরা নিজেদের বাড়িতে দেখে থাকবো। দেশি মুরগি কিছুদিন ডিম পাড়ার কুচে হয় এবং ডিমে তা দিতে আগ্রহী হয়। এরুপ মুরগিকে ১০-১২ টি ডিম দিয়ে বসানো হয়। একটি মুরগি তার ডিম তা দিচ্ছে।
প্রথমত মুরগির জন্য ঝুড়িতে খড়কুটা দিয়ে বাসা বানাতে হয়। বাসাটি ঘরের নির্জন কোণে রাখতে হবে। মুরগির বাসা ৩৫ সেমি ব্যাস এবং ১০ সেমি গভীর হবে। ডিমে বসানোর পূর্বে মুরগিকে ভালোভাবে খাওয়াতে হবে। মুরগির সামনে দানাদার খাবার ও পানি রাখতে হবে। ৮ - ১০ দিন পর ডিমগুলো সূর্যের আলোয় পরীক্ষা করতে হবে। ডিমের ভিতরে ভূণ থাকলে কালো দাগের মতো দেখাবে।
২১ তম দিনে "ডিম থেকে বাচ্চা বেরিয়ে আসবে"। বাচ্চারা প্রায় দুইমাস মায়ের তত্ত্বাবধানে থাকে। এর পর বাচ্চারা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করে।
ইনকিউবেটর যন্ত্রদ্বারা ডিম ফুটানো পদ্ধতি : প্রাকৃতিক ও ইনকিউবেটর দ্বারা ডিম ফুটাতে একই সময়ের প্রয়োজন হয়। এই পদ্ধতির সুবিধা হলো একসাথে অনেক সংখ্যা ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন করা যায়। এই পদ্ধতি তে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর সময় রোগ নিয়ন্ত্রণ করে সুস্থ বাচ্চা উৎপাদন করা যায়।
এই পদ্ধতিতে মুরগিগুলো ডিমে তা দেয় না দেওয়ার কারণে ডিম উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। তাই বাণিজ্যিকভাবে এই পদ্ধতি খামারিদের নিকট খুব জনপ্রিয়।
ইনকিউবেটর তাপমাত্রা, অদ্রতা, ও বায়ু প্রবাহ নিয়ন্ত্রিত একটি বৈদ্যাুতিক যন্ত্র। এতে শত লক্ষাধিক ডিম ফুটানো যায়।
ইনকিউবেটর যন্ত্র দ্বারা বাচ্চা ফোটানোর সময় নিম্নলিখিত বিসয়সমূহ গুরুত্ব সহকারে অনুসরণ করতে হবে।
১। তাপমাত্রা : ইনকিউবেটরের তাপমাত্রা ৯৯.৫ - ১০০.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। উল্লেখ্য উপযুক্ত তাপমাত্রা না পেলে ভ্রুণের কোষ বিভাজন হবে না এবং ভ্রুণের মৃতু হয়।
২। আদ্রতা : ইনকিউবেটরের মধ্যে প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা ৬৫-৭০ এর মধ্যে রাখা হয়। ইনকিউবেটর আর্দ্রতা কম থাকলে ডিম থেকে পানি বাস্পায়িত হয়ে ভ্রুণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
৩। বায়ুপ্রবাহ : ভ্রুণের অক্সিজেন গ্রহন এব ডিম থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস বের হওয়ার জন্য বায়ুপ্রভাহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই ইনকিউবেটরে বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে অক্সিজেনের প্রবেশ এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড দূরীকরণের ব্যবস্থা থাকে বায়ুপ্রবাহ না থাকলে ভ্রুণের মৃত্যু হয়।
৪। সেটিং ট্রেতে ডিম বসানো : সেটিং ট্রেতে ৫৫-৬০ গ্রাম ওজনের ডিম বসানো হয়। ডিমগুলো অলশ উপরের দিকে এবং সরু অংশ নিচের দিকে থাকে। ইনকিউবেটর চলাকালীন সময়ে ডিমগুলো ৪৫ ডিগ্রি কৌণিক আবস্থানে থাকে।
৫। ডিম ঘুরানো : ডিমের সর্বদিকে সমানভাবে তাপ, অর্দ্রতা ও বায়ু প্রবাহ পাওয়া জন্য ডিমগুলোকে দৈনিক ৩-৮ বার ঘুরানো হয়ে থাকে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা সম্পাদিত হয়ে থাকে।
৬। হ্যাচিং ট্রেতে ডিম স্থানান্তর : মুরগির ডিমের ক্ষেত্রে ১৮ দিন পর ডিমগুলোকে সেটিং ট্রে থেকে হ্যাচিং ট্রেতে স্থানান্তর করা হয় । হঁাসের ডিমের ক্ষেত্রে ২৫ তম দিনে সেটিং ট্রে থেকে হ্যাচিং ট্রেতে স্থানান্তর করা হয়। উল্লেখ্য সেটিং ট্রেতে বাচ্চা ফোটার কোনো সুযোগ নেই। হ্যাচিং ট্রেতে তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি ফারেনহাইট কমিয়ে দিতে হয়।
৭। ডিম ক্যান্ডলিং করা : আলো দ্বারা ডিমের ভিতরের অংশ পর্যবেক্ষণ করাকে ক্যান্ডলিং বলে । ডিম বসানোর সাত দিন পর অনুর্বর ডিম ও মৃত ভ্রুণসহ ডিম পৃথক করার জন্য সকল ডিমকে ক্যান্ডলিং করা হয়। আবার ১৪ তম দিনে ক্যান্ডলিং করে একই রকমভাবে মৃত ভ্রুণসহ ডিম পৃথক করা হয়। ভ্রুণসহ মৃত ডিম, পচা ডিম, পৃথক না করলে ইনকিউবেটরের মধ্যে সুস্থ ডিম জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়।
৮। ফিউমিগেশন : এটি রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের মাধ্যমে জীবাণু ধ্বংস করার একটি পদ্ধতি। এই ক্ষেত্রে ১০০ ঘনফুট জায়গার জন্য ৭০ সিসি ফরমালিন ও ৩৫ গ্রাম পটাশিয়াম পার ম্যাঙ্গানেট ব্যবহার করয় হয়। এই মিশ্রণটি মাটির পাত্রে রেখে ব্যবহার করা হয়। রাসায়নিক মিশ্রণটি অত্যন্ত বিষাক্ত উৎপাদনের মাধ্যমে রোগজীবাণু ধ্বংস করে। তাই ব্যবহারের সময় জানালা-দরজা বন্ধ করে সকলকেই দ্রুত ঘর ত্যাগ করা উচিত...
ইনকিউবেটর, সেটিং ট্রে, হ্যাচিং ট্রে, ক্যান্ডলিং, ফিউমিগেশন, দেশি মুরগি, ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানো।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন